HS Bengali Suggestion 2022 –ভারতবর্ষ (সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) গল্প প্রশ্ন উত্তর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
Hs Bengali Suggestion, Hs Bengali Suggestion 2022, Hs Bengali Suggestion 2022 all, Hs Bengali Suggestion 2022 answers, Hs Bengali Suggestion 2022 bangla, Hs Bengali Suggestion 2022 bengali, Hs Bengali Suggestion 2022 bengali pdf, Hs Bengali Suggestion 2022 board, Hs Bengali Suggestion 2022 class 12, Hs Bengali Suggestion 2022 in bengali, Hs Bengali Suggestion 2022 in west bengal, Hs Bengali Suggestion 2022 question and answer
HS Bengali Suggestion 2022 –ভারতবর্ষ (সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) গল্প প্রশ্ন উত্তর
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার অধ্যায় ভিত্তিক (ভারতবর্ষ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) সাজেশন নিম্নে দেওয়া হল। এখানে উল্লিখিত অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি দেওয়া হল। এই প্রশ্ন এবং উত্তর গুলি 2022 সালের উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা যারা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের জন্য জন্য সাজেশন খুঁজে চলেছো, তারা নিম্নে দেওয়া প্রশ্ন এবং উত্তর গুলি ভালো করে পড়তে পারো।
MCQ প্রশ্নোত্তর [ মান ১ ] HS Bengali Suggestion–ভারতবর্ষ (সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) প্রশ্নউত্তর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
Time's up
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর [মান ১]HS Bengali Suggestion –ভারতবর্ষ (গল্প) প্রশ্নউত্তর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
1.’ডাওর’ কাকে বলে?
Answer :শীতকালের বৃষ্টিকে রাঢ়বাংলার চাষাভুষোরা ‘ডাওর’ বলে |
2.‘ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ” —কোন ঘটনা সবাইকে অবাক করেছিল ?
Answer : থুরথুরে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি ওই দুর্যোগে কীভাবে বেঁচেবর্তে হেঁটে চায়ের দোকানে আসতে পারে , সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ।
3.“সেই সময় এল এক বুড়ি।” –বুড়ির অবয়ব কেমন ছিল?
Answer : বুড়ি থুথুরে কুঁজো, একমাথা সাদা চুল, খর্বুটে, পরনে ছেঁড়া কাপড়, গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল |
4.নাপিত নকড়ি বুড়িকে কী বলতে শুনেছিল ?
Answer : নাপিত নকড়ি বুড়িকে হরিবােল হরিবােল বলতে শুনেছিল ।
5.চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা কীসের প্রতীক্ষা করছিল ?
Answer : চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা রােদ ঝলমল একটা দিনের প্রতীক্ষা করছিল ।
6.’ফাঁপি’ কী?
Answer :শীতকালে বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাস বইলে তাকে ‘ফাপি’ বলে |
7.“ বােঝা গেল , বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে । ” বুড়ির কী অভিজ্ঞতা ছিল ?
Answer : গাছের মােটা শিকড়ে বসে শিকড়ের পিছনে গাছের খোঁদলে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসার অভিজ্ঞতা বুড়ির আছে ।
8.“ তর্কাতর্কি , উত্তেজনা হল্লা চলতে থাকল । ” কী বিষয়ে , কাদের মধ্যে তর্কাতর্কি , উত্তেজনা ও হল্লা চলছিল ?
Answer : সমাজসচেতন লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধা হিন্দু না মুসলমান এই বিষয়কে কেন্দ্র করে হিন্দু – মুসলমানদের মধ্যে । তর্কাতর্কি , উত্তেজনা , হল্লা চলছিল ।
9.“ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল ” অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ?
Answer : সকালে যে বুড়ির মৃতদেহ গ্রামের যুবকরা নদীর তীরে ফেলে দিয়ে এসেছিল , বিকেলে মাঠ পেরিয়ে মুসলমানরা সেই দেহকেই চ্যাংদোলায় বহন করে আনছে ।
10.“সবার হাতে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র । – কী কারণে সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়েছিল?
Answer :বুড়ি হিন্দু না মুসলমান– এই বিতর্কে হিন্দু আর মুসলমানেরা জড়িয়ে পড়েছিল। সেই বিতর্ক চরমে পৌঁছলে পরস্পরকে আক্রমণের জন্য তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়েছিল।
11.“চৌকিদার হাঁ করে দেখছে।” – চৌকিদার কী দেখছে?
Answer : চৌকিদার দেখছে বুড়ি নড়তে নড়তে উঠে বসার চেষ্টা করছে আর দু-দিকের সশস্ত্র জনতা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
12.“একদা সে ছিল পেশাদার লাঠিয়াল। এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
Answer : এখানে ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের করিম ফরাজির কথা বলা হয়েছে।
13.“বৃষ্টিতে তা হলো ধারালো” —কী ধারালো হল?
Answer :রাঢ় বাংলার জাঁকালো শীতের মধ্যে বৃষ্টি হলে গাঁত খুব ধারালো হয়।
14.“আমি স্বকর্ণে শুনেছি।” –কে, কী শুনেছিল?
Answer : ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে ফজলু সেখ বুড়িকে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লা’ বলতেশুনেছে।
15.“তার সপক্ষে অনেক প্রমাণ জুটে গেল।”—কার সপক্ষে কী প্রমাণ জুটে গেল?
Answer : গাঁয়ের ভটচাজমশাই বুড়িকে শ্রীহরি বলতে শুনেছে। এই কথার সমর্থন করে নকড়ি নাপিত বলল সে বুড়িকে ‘হরিবোল’ বলতে শুনেছে, নিবারণও তার পক্ষ নিল। এইভাবে অনেক প্রমাণ জুটে গেল।
16.“বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে বলা হয় কী?
Answer : বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে তাকে ফাপি বলা হয়।
17.পউষে বাদলা সম্পর্কে গ্রামের ‘ডাকপুরুষের’ পুরনো ‘বিচন’টি কী ?
Answer : পউষে বাদলা সম্পর্কে ‘ডাকপুরুষ’-এর পুরনো বচন হলো- শনিতে সাত, মঙ্গলে পাঁচ, বুধে তিন— বাকি সব দিন এক দিন বৃষ্টি হবে।
18.“নিবারণ বাগদি রাগী লোক”– নিবারণ বাগদি আগে কী করত?
Answer : নিবারণ বাগদি একসময় দাগি ডাকাত ছিল, ডাকাতি করত।
19.“তাই লোকের মেজাজ গেল বিগড়ে। কী কারণে লোকের মেজাজ বিগড়ে গেল?
Answer :’ভারতবর্ষ’ গল্পের কাহিনি অনুসারে শীতকালে বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাসের এক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তখন মাঠ ভরতি ধানের ক্ষতির আশঙ্কায় লোকের মেজাজ বিগড়ে গেল।
20.’ভারতবর্ষ’ গল্পে যে বাদলার কথা আছে, তা কোন্ দিন লেগেছিল?
Answer :’ভারতবর্ষ’ গল্পে যে বাদলার কথা আছে তা মঙ্গলবারে লেগেছিল।
21.“বুড়ি খেপে গেল” –কোন্ কথা শুনে বুড়ি খেপে গিয়েছিল?
Answer : চায়ের দোকানের ছেলেরা বুড়িকে বলেছিল যে, ওই বর্ষায় তেজি টাট্টুর মতো বেড়িয়ে পড়েছে | ওই কথা শুনেই বুড়ি খেপে গিয়েছিল |
22.মোল্লাসাহের কী জন্য শহরে গিয়েছিলেন?
Answer : সেদিন মামলার দিন ছিল বলে মোল্লাসাহেব শহরে গিয়েছিলেন।
23.“আরবি মন্ত্র পড়ছে ওরা।”— কারা আরবি মন্ত্র পড়ছিল?
Answer :মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নদীর চড়া থেকে তুলে আনার সময় আরবি মন্ত্র পড়ছিল।
24.“তাই ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে।”— কী কারণে ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে?
Answer :ধানের মরশুম; তাই আজ না হোক কাল পয়সা পাবেই—এই আশায় চা-ওয়ালার ধারের অঙ্ক বেড়েই চলে।
25.“নারায়ে তকবির–আল্লাহু আকবর।”— এ কথার অর্থ কী?
Answer :উদ্ধৃত কথাটির অর্থ হল উচ্চকণ্ঠে বলো আল্লাই সর্বশ্রেষ্ঠ।
26.‘লাইলাহা ইল্লাল্ল’ কথার অর্থ কী?
Answer :এই কথাটির অর্থ হল–আল্লা ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।
27.“সবাই দিগন্তে চোখ রাখল।” – কী কারণে সবাই দিগন্তে চোখ রেখেছিল?
Answer :বুড়ির মৃতদেহ নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে এসে সবাই ভেবেছিল ঝাঁকেঝাঁকে শকুন নামবে। তাই তারা দিগন্তে চোখ রেখেছিল |
28.“নির্ঘাত মরবে বুড়িটা।” –এমন মন্তব্যের কারণ কী?
Answer :শীতের ভয়ংকর ঝড়বাদলের মধ্যে উদ্দিষ্ট বুড়ি একা একাই রাস্তায় রাস্তায় বেরিয়েছিল। এই কারণেই তার সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।
29.“বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হল।” –চৌকিদারের পরামর্শ মেনে বুড়ির শবদেহকে কী করা হল?
Answer :বিজ্ঞ চৌকিদার মৃত বুড়িকে দু-মাইল দূরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে পরামর্শ দিয়েছিল।
30.“তা কি হয় আমরা বেঁচে থাকতে?” – কী হওয়ার কথা বলা হয়েছে?
Answer :মৃত বুড়িকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে এসেছিল। গাঁয়ের মোল্লা বুড়িকে মুসলমান ভেঙে নিয়ে উক্ত ঘটনাটি মেনে নিতে পারেন নি।
31.“শনিতে সাত, মঙ্গলে পাঁচ, বুধে তিন–বাকি সব দিন-দিন।” —পউষে বাদলা সম্পর্কে প্রচলিত গ্রামের ‘ডাকপুরুষের’ পুরোনো ‘বচন’-টি ব্যাখ্যা করো।
Answer :ডাকপুরুষের বচনটির অর্থ হল—শনিতে বাদলা লাগলে সাত দিন থাকবে, মঙ্গলে লাগলে পাঁচ দিন ও বুধে তিন দিন| বাকি দিনে, বাদলা লাগলে দিনের দিনেই বন্ধ হয়ে যাবে।
32.“উঁকি মেরে সব দেখে শুনে বললেন—অসম্ভব।” – কে, কী দেখে অসম্ভব বলেছিল?
Answer : ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বর্ণিত গ্রামের মোল্লাসাহেব মৃত বুড়িকে উঁকি মেরে দেখেন এবং বলেন যে, বুড়ি কখনই মুসলমান নয়।
33.“মুখটা বিকৃত হয়ে গেল।” – কী কারণে, কার মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল?
Answer :‘ভারতবর্ষ’ গল্পের মৃত বুড়ি চ্যাঙদোলা থেকে উঠে বসে দু-দিকের বিবদমান জনতাকে দেখল। তাদের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে ব্যঙ্গ করতেই বুড়ির মুখটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল|
34.“মাথায় টুপিও পরেছে কেউ কেউ।”— কখন, কাদের মাথায় টুপি দেখা গিয়েছিল?
Answer : মৃত বুড়িকে মুসলমান ভেবে ওই সম্প্রদায়ের কিছু লোক তার মৃত দেহকে নদীর তীর থেকে ফিরিয়ে আনছিল। তখনই তাদের কারো কারো মাথায় টুপি দেখা গিয়েছিল।
35.“নিবারণের চ্যাঁচানি বরদাস্ত করবে কেন সে?”—এখানে যার কথা বলা হয়েছে, তার সম্পর্কে এমন উক্তির কারণ কী? Answer :করিম ফরাজি একসময় ছিল পেশাদার লাঠিয়াল। সেই কারণেই নিবারণের চেঁচানি সে বরদাস্ত করবে না বলে মনে করা হয়েছে।
রচনাধর্মী বড়ো প্রশ্নোত্তর [মান ৫]HS Bengali Suggestion –ভারতবর্ষ (গল্প) প্রশ্নউত্তর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
1.“সেখানেই গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট বাজার।”—বাজারটি কোথায় অবস্থিত ছিল? এই বাজারটির বর্ণনা দাও।
Ans. বাজারটির অবস্থান সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটি গড়ে উঠেছে রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট গ্রাম্য বাজারকে কেন্দ্র করে। পিচের সড়ক আদ্যিকালের এক বটগাছের পাশে যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানেই গড়ে উঠেছিল বাজারটি।
বাজারটির বর্ণনা: বাজারটিতে সবমিলিয়ে ছিল তিনটি চায়ের দোকান, দুটো সন্দেশের দোকান, তিনটি পোশাকের দোকান, একটা মনোহারির দোকান এবং দুটি মুদিখানা। এ ছাড়াও একটি আড়ত এবং একটি হাস্কিং মেশিনেরও দোকান ছিল সেখানে। বাজারটির উত্তরে ছিল বিরাট একটি মাঠ এবং পেছনে ছিল বাঁশবন। চারপাশের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এখানেই কেনাকাটা করতে আসত।
পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও বাজারে বিদ্যুৎ ছিল। সকাল থেকে শুরু করে রাত ন-টা পর্যন্ত এই বাজার খোলা থাকত। চারপাশের গ্রামের মানুষদের কাছে এটা তাই একটা আড্ডার জায়গাও ছিল। ‘সভ্যতার ছোট উনোনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে’ তারা প্রায়শই বাজারে আসত, বিশেষত সন্ধ্যায়, যখন গ্রামগুলি প্রায় অন্ধকার থাকত। রাত ন-ন্টায় বাজার ফাঁকা হয়ে গেলে জনহীন বাজারের বৈদ্যুতিক আলোয় দু-একটা নেড়িকুত্তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। একটা-দুটো ট্রাক কখনো-সখনো রাস্তা দিয়ে শহরের দিকে চলে যেত। রাতে নিস্তব্ধ বাজারের পাশের বটগাছ থেকে পাচার ডাক শোনা যেত।
2.“সেই সময় এল এক বুড়ি।”—লেখক বুড়ির সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
Ans.
বুড়ির বর্ণনা:
কথামুখ: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে আমরা এক থুথুরে বুড়ির কথা জানতে পারি। এক বৃষ্টিভেজা শীতের দিনে গ্রামের কর্মহীন মানুষেরা চায়ের দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছিল আর নিজেদের মধ্যে নানারকম তর্কবিতর্কে মেতে উঠেছিল। সেই সময় সেখানে আগমন ঘটে থুথুড়ে কুঁজো এক ভিখিরি বুড়ির।
চেহারার বর্ণনা: লেখকের কথায় তার ‘রাক্ষুসী চেহারা’। একমাথা সাদা চুল, পরনে একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড়, গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল, আর হাতে তার একটা বেঁটে লাঠি। পিচের রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একই তালে অবিচলিত ভঙ্গিতে হেঁটে সে চায়ের দোকানে এসে ঢুকল। তার ক্ষয়া ও খর্বাকৃতি চেহারা এবং মুখে “সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন প্রকট।” চেহারার থেকেও বিস্ময়কর ছিল তার চড়া মেজাজ।
বুড়ির স্বাধীনচেতা স্বভাব : প্রবল বৃষ্টিতে তার আগমনে বিস্মিত মানুষজন জানতে চাইল যে সে কোথা থেকে এসেছে। বুড়ি তখন রাগত ভঙ্গিতে জবাব দেয়—“সে কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা?” তার তেজ নিয়ে উপস্থিত মানুষেরা কিছু কৌতুক করলে বৃদ্ধা আরও ঝাঁজালো উত্তর দিয়ে বলে—“তোমাদের কত্তাবাবা টাট্রু।” চায়ের দাম মিটিয়ে বৃদ্ধা যখন আবার রাস্তায় নেমে যায়, তখন তারা তার মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করলে বৃদ্ধার উত্তর ছিল “তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।” গল্প শেষে যখন তার তথাকথিত মৃতদেহের অধিকার নিয়ে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরা সংঘাতের মুখোমুখি তখন তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বৃদ্ধা বলেছে—“আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে? চোখ গেলে দোবো”
ইতিকথা : নিজস্ব মেজাজে বৃদ্ধা যেন হয়ে উঠেছে ধর্মান্ধতার এক প্রবল প্রতিবাদ ।
3.“তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।”—কে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
Ans. বক্তা: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বৃষ্টি বিঘ্নিত শীতের দিনে চায়ের দোকানে আগন্তুক বৃদ্ধাটি উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
প্রেক্ষাপট: প্রবল বৃষ্টিতে গ্রামের মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে চায়ের দোকানে আড্ডারত, সেই সময়েই সেখানে আগমন ঘটে বয়সের ভারে জীর্ণ বৃদ্ধার, যিনি প্রবল বৃষ্টিতেও চলাফেরায় সাবলীল। চায়ের দোকানে চা পান করে তিনি উপস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকান, কিন্তু নিজে কিছু বলেন না। তখন কৌতূহলী মানুষদের মধ্যে থেকে কেউ একজন জানতে চান যে কোথা থেকে তার আগমন ঘটছে। মেজাজি বৃদ্ধা রাগত ভঙ্গিতে পালটা প্রশ্ন করেন—“সে কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা?” উপস্থিত মানুষেরা সেই তেজ দেখে হেসে ওঠে এবং তির্যক মন্তব্য করে—“এই বাদলায় তেজি টাট্টুর মতন বেরিয়ে পড়েছে।” বৃদ্ধাও পালটা প্রতিক্রিয়া দেন—“তোমাদের কাবাবা টাট্টু।” উপস্থিত জনতাকে তিনি ‘অকথাকুকথা’ বলতে নিষেধও করেন। শেষপর্যন্ত বৃদ্ধা কম্বলের ভিতর থেকে একটি ন্যাকড়ায় বাঁধা পয়সা খুলে চায়ের দাম মিটিয়ে আবার রাস্তায় নেমে যায়। যা দেখে সকলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যে বৃদ্ধার নিশ্চিত মৃত্যু হবে। আর তা শুনতে পেয়েই বৃদ্ধা ঘুরে দাঁড়ায় এবং বলে— “তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।”
4.“ কতক্ষণ সে এই মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারত কে জানে ? ” — ‘ সে ’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন ?
Ans. ‘ সে ’ বলতে এখানে বিপন্ন আইনরক্ষক নীল উর্দিপরা চৌকিদারকে বােঝানাে হয়েছে ।
মৃত ভেবে বৃদ্ধার ধর্ম – পরিচয়ের প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বিবদমান হয়ে উঠেছিল । উভয় ধর্মের বেশ কিছু মানুষ বৃদ্ধার ধর্ম – পরিচয়ের প্রমাণ দিতে শুরু করলেন । মােল্লাজি , ফজলু সেখ , করিম ফরাজি প্রমাণ করতে শুরু করল বৃদ্ধা মুসলমান । আবার ভট্টচামশাই , নিবারণ বাগদি , নকড়ি নাপিত প্রমাণ দিল বৃদ্ধা হিন্দু ধর্মাবলম্বী । ধর্ম পরিচয়ের প্রশ্নে বচসা বাড়তে লাগল , তর্কাতর্কি – উত্তেজনা – হল্লা চলতে থাকল । দু’পক্ষের মানুষেরাই মৃতদেহের উপর দাবি জানিয়ে বাঁশের চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয় । প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে , দোকানের ঝাপ বন্ধ হতে থাকে । তারপরেই দেখা যায় গ্রাম থেকে অনেক লােক দৌড়ে আসছে । সবার হাতেই মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র । বৃদ্ধার শবদেহের দুপাশে স্পষ্ট দুটো জনতা ’ – কে দণ্ডায়মান দেখা যায় ।
এই পরিস্থিতিতে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতাে কাজ করে মােল্লাসায়েব এবং ভচামশাইয়ের ইন্ধন । এরই ফলশ্রুতিতে ধুন্ধুমার গর্জন – প্রতিগর্জন শােনা গেল এবং জনতা মারমুখী হয়ে উঠল । উভয় পক্ষই বৃদ্ধার ধর্মপরিচয়ের প্রশ্নে নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রত হলাে । সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রস্তুতির পটভূমিকাকেই মারমুখী জনতা ‘ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
5.“শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল।”— কার কথা বলা হয়েছে? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন?
Ans. উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: বাংলা সাহিত্য জগতের একজন অন্যতম সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে শীতের দিনে ‘ফাপি’র প্রতিকূল আবহাওয়ায় গ্রামে চলে আসা বৃদ্ধা–যার মৃতদেহকে ঘিরে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল—সেই বৃদ্ধার কথাই এখানে বলা হয়েছে।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তির আবছা হয়ে যাওয়ার কারণ: গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা নদীর চড়ায় ফেলে আসা বৃদ্ধার মৃতদেহকে গ্রামে ফিরিে আনে এবং তাকে মুসলমান দাবি করে কবরস্থ করার উদ্যোগ নেয়। এই নিয়ে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের উপক্রম হয়। মোল্লাসাহেবের নেতৃত্বে একপক্ষ থেকে চিৎকার ওঠে “আল্লাহ্ আকবর”, অন্যপক্ষ থেকে ভটচামশাইয়ের নেতৃত্বে গর্জন শোনা যায়—“জয় মা কালী।” এই সময়েই দেখা যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য। বুড়ির মৃতদেহটি নড়ছে এবং আস্তে আস্তে তা উঠে বসার চেষ্টা করছে। বুড়ি উঠে দাঁড়ায়, ভিড়কে দেখে এবং বিকৃত মুখে হেসে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে রাস্তা ধরে সে এগিয়ে যায়। যুযুধান মানুষেরা সরে গিয়ে তাকে পথ করে দেয়। দূরের দিকে ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা যেন ভারতবর্ষের অন্তরাত্মার প্রতীক হয়ে ওঠে, যেখানে বিদ্বেষ বা উগ্রতার কোনো জায়গা নেই।
6.‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বুড়ির দীর্ঘনিদ্রাভঙ্গ কীভাবে দুই সম্প্রদায়ের মারমুখী জনতাকে শান্ত করল, তা আলোচনা করো।
Ans. উত্তর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের শেষদিকে বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে সশস্ত্র হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসীদের মধ্যে যখন রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই বুড়ির দীর্ঘনিদ্রা ভঙ্গ হয়। বাঁশের মাচায় শায়িত বুড়ি হঠাৎ নড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে। দু-পক্ষের মারমুখী জনতা এবং চৌকিদার বিস্ময়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। বুড়ি এরপর ক্রমে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার দু-দিকের দু-দলের ভিড় দেখে তার মুখ ব্যাজার হয়ে যায়। সেই ব্যাজার মুখেই তারপর ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠে সে। চৌকিদারের “বুড়িমা! তুমি মরনি!”— এই বিস্ময়সূচক প্রশ্ন শুনে এরপর সে শতগুষ্টি-সহ চৌকিদারেরই মরণ কামনা করে। সমবেত জনতাও যখন চিৎকার করে একই কথা বলতে থাকে তখন বুড়ি তাদের ‘মুখপোড়া’ বলে গালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে। বুড়ি হিন্দু না মুসলমান—এ কথা এরপর একজন জিজ্ঞাসা করলে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বুড়ি জনতাকে জানায় যে, তারা তাদের চোখের মাথা খেয়েছে। ‘নরকখেকো’, ‘শকুনচোখো’ ইত্যাদি গালাগাল সহযোগে সে জনতাকে জানায় যে, তারা বুড়িকে দেখে তার ধর্মপরিচয় যেহেতু বুঝতে পারছে না, তাই বুড়ি তাদের সবার চোখ গেলে দেবে। জনতাকে দূর হতেও বলে সে। কথাগুলো বলে বুড়ি নড়বড় করতে করতে সেখান থেকে বেরোলে জনতা সরে গিয়ে তাকে পথ করে দেয়। দিনের শেষ রোদ্দুরে দুরের দিকে ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে যায় বুড়ি। এভাবেই দীর্ঘনিদ্রা থেকে জেগে ওঠা বুড়ি সম্প্রদায়ের মারমুখী জনতাকে শান্ত করেছিল।
7.“দেখতে-দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে।”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও।
Ans. প্রসঙ্গ: বাংলা সাহিত্য জগতের এক অপ্রতিম কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে রাঢ়বাংলায় এক পৌষমাসের অকালদুর্যোগে মৃত এক থুথুড়ে ভিখারিনির মৃতদেহের সৎকারকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রবল বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল, সে প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ:
বুড়িকে নিয়ে টানাপোড়েন: বৃদ্ধা ভিখারিনি প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করে কয়েকজন হিন্দু গ্রামবাসী তাকে শুকনো নদীর চড়ায় ফেলে আসে। কিন্তু সেদিনই বিকেলে দেখা যায় যে, কয়েকজন মুসলমান আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে বুড়িকে কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসছে।
হিন্দু-মুসলিম বচসা : বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে মোল্লাসাহেবের নেতৃত্বে মুসলমানরা এবং ভটচাজমশাইয়ের নেতৃত্বে হিন্দুসম্প্রদায় প্রবল বচসায় জড়িয়ে পড়ে।
উত্তেজনার প্রসার : বাজারের দোকানপাট একে একে বন্ধ হতে শুরু করে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দুই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ অস্ত্রশস্ত্র সহ অকুস্থলে জড়ো হতে শুরু করে। বুড়ির মাচার দু-পাশে জড়ো হওয়া দু-দলের জনতা অসহায় চৌকিদারের উপস্থিতিতে পরস্পরের উদ্দেশ্যে প্ররোচনামূলক উক্তি করতে থাকে। মোল্লাসাহেব ‘নারায়েতকবির’, ‘আল্লাহুআকবর’ ইত্যাদি ধর্মীয় স্লোগান তুলে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে থাকেন। অন্যদিকে ভটচাজমশাই মাঝে-মাঝেই চিৎকার করে মা কালীর নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন।
আইনরক্ষকের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা: এরকম দাঙ্গা পরিস্থিতির মাঝখানেও কর্তব্য-সচেতন বিপন্ন আইনরক্ষক চৌকিদার তার লাঠিটি উচিয়ে দু-পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো পক্ষ এক কদম এগোনোর চেষ্টা করলেই সে লাঠি ঠুকে ‘সাবধান’ বা ‘খবরদার’ বলে গর্জন করতে থাকে। বালির বাঁধ কিন্তু তার প্রচেষ্টা যখন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ার মুখে, ঠিক তখনই দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে উঠে দাঁড়িয়ে বুড়ি সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দেয়।
8.“ আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? ” – কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছে ? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ উদঘাটন করাে ।
অথবা , “ দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য । ” – দৃশ্যটি বর্ণনা করাে । এই দৃশ্যের মাধ্যমে বুড়ি কী শিক্ষা দিয়ে গেল ?
অথবা , ভারতবর্ষ ’ গল্পে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের যে রূপটি ফুটে উঠেছে তার সম্পর্কে লেখাে । প্রসঙ্গত গল্পে বুড়ির মৃত্যুর পর পুনরায় বেঁচে ওঠার ঘটনাটি কোন তাৎপর্য বহন করে ?
Ans. বাংলা সাহিত্য জগতের এক বিখ্যাত কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে মরণঘুম থেকে জেগে ওঠার পর উৎসাহী ও বিস্মিত জনতা বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করে সে হিন্দু না মুসলমান । এ প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন ।
বৃদ্ধার এই উক্তিতে স্পষ্ট তিনি ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানবিকতাবােধে । উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন । সকলেই যখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৃদ্ধাকে মূল্যায়ন করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তিনি দৃষ্টিভঙ্গির অভিমুখকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন । সাধারণ মানুষের প্রবণতা এই যে তারা পূর্ব নির্দিষ্ট কিছু প্রথাবদ্ধ দৃষ্টিতে মানুষের বিচার করে । কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি সভ্যতার পরিপন্থী ও বিদ্বেষমূলক । বৃদ্ধা এ গল্পে সম্প্রীতির বার্তা শুনিয়েছেন । মানুষকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার বাণী শুনিয়েছেন । ভারতবর্ষ প্রাচীনকাল থেকেই প্রেম – প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছে । বৃদ্ধা তারই ধারক ও বাহক । এ গল্পে তিনি যেন ভারতজননীতে রূপান্তরিত । বিবদমান , বিদ্বেষ পােষণকারী , অসূয়া মনােভাবের অধিকারী ভারত সন্তানদের তিনি সংশােধন করতে এসেছেন । শান্ত – সৌম্য গ্রামবাংলার অন্তরে যে বিদ্বেষের বিষবাষ্প প্রচ্ছন্ন থাকে তাকেই তিনি বাইরে বের করে এনে দূর করতে চেয়েছেন । এ গল্পে বৃদ্ধা জাতি – ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবিক উদারতার বাণী প্রচার করেছেন ।
9.“ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল । ” – অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ? দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলার কারণ কী ছিল ?
Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ভারতবর্য গল্পে হিন্দুদের দ্বারা ফেলে দিয়ে আসা বুড়িকে পুনরায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লােকেরা বাজার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল । আর এই যাওয়ার দৃশ্যকে লেখক ‘ অদ্ভুত দৃশ্য ’ বলেছেন ।
শীতের অকাল দূর্যোগের দিনে বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে এক বট গাছের তলায় এক বুড়ি আশ্রয় নেয় । কয়েকদিন পরে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল । কিন্তু বট তলায় সেই বুড়িটিকে সবাই দেখল নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে । অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও বুড়ি নড়ছে না দেখে সকলে সিন্ধান্ত নিল যে , বুড়ি মৃত । পাঁচ ক্রোশ দূরে থানা । তাই বিজ্ঞ চৌকিদার পরামর্শ দিল ‘ – নদীতে ফেলে দিয়ে এসাে ! ঠিক গতি হয়ে যাবে- যা হবার । আর এই ভাবেই বুড়ির মৃতদেহকে নদীর শুকনাে ডাঙায় ফেলে দেওয়া হলাে । আর সবাই দিগন্তে চোখ রাখল । কখন ঝাঁকে ঝাকে শকুন এসে মৃতদেহ খুবলে নেবে । অথচ বিকেলে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখল । যারা বুড়িকে ফেলে এসেছিল তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের । আর যারা বুড়িকে নদীর চড়া থেকে তুলে এনেছিল তারা মুসলমান । আর এই ভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তাকে নিজ ধর্মের মনে করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে শুরু করে । কোনাে পক্ষই কোনাে কর্তব্য পালন করেনি বুড়ির প্রতি অথচ ক্ষমতা দেখানাের চেষ্টা করেছে । তাই দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলা হয়েছে ।
10.ভারতবর্ষ ’ গল্পটিতে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তা বিবৃত করাে ।
অথবা , “ আনুষ্ঠানিকতাই প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে মানবধর্মের সবচেয়ে বড়াে বিভেদ ঘটিয়ে দেয় । ” — ভারতবর্ষ ‘ গল্পটি অনুসরণে বিষয়টি বুঝিয়ে দাও । অথবা , ভারতবর্ষ ’ গল্পে লেখকের সমাজ সচেতনতার কী পরিচয় পাওয়া যায় , তা আলােচনা করাে ।
Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ ’ গল্পটিতে এদেশের গ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে । অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার ফলে কুসংস্কার এবং সাম্প্রদায়িকতা ভারতবর্ষকে আজও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রেখেছে । গল্পটিতে এই বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি লেখক গল্পের শেষে পাঠক ও জনতাকে নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে ।
ভারতবর্ষ গল্পে আমরা দেখি , কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে । মানুষের মঙ্গলের জন্য সমাজে ধর্মের উদ্ভব । কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেড়েছে মানুষে মানুষে অবিশ্বাস , ঘৃণা ও হানাহানি । মহামানবরা মানুষের সাথে মানুষের মিলনের কথা , বিশ্বাসের কথা বলেছেন ; শুনিয়েছেন ভালােবাসার বাণী । যুগে যুগে এসবই যে বৃথা প্রয়াস ছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করি ভারতবর্ষ গল্পটিতে । গল্পের প্রেক্ষাপট এক ছােট্ট জনপদ , কৃষিনির্ভর মানুষ , চায়ের দোকানে আড্ডা এবং পৌষের বাদলায় এক থুথুরে , জরাজীর্ণ বুড়ির সেখানে হঠাৎ উদয় । এরপর বুড়ির মৃত্যু ও তার ধর্ম নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরােধ যা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিচ্ছিল ।
ভরা শীতের টানা বৃষ্টিতে বটতলায় আশ্রয় নেওয়া বুড়ি নিঃসাড় , মৃতবৎ পড়েছিল । গ্রামের হিন্দুরা বুড়িকে মৃত মনে করে মাচায় বেঁধে দূরে নদীর ধারে ফেলে আসে । আবার মুসলিমরা তাকে বিকেলে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসে । দু’পক্ষই বুড়িকে তাদের ধর্মের লোেক ভাবে । এরপর দু’পক্ষই নিজেদের দাবির সমর্থনে যুক্তি , প্রমাণ ইত্যাদির অবতারণা করে । কিন্তু কোনােভাবেই সমস্যা মিটে না । পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে , দাঙ্গার চেহারা নেয় । আর তখনই হঠাৎ জেগে ওঠে ‘ মৃত ’ বুড়ি । উৎসাহী একজন বুড়িকে জিজ্ঞাসা করে যে সে হিন্দু না মুসলমান । এই প্রশ্নে বুড়ি রেগে গিয়ে দু’পক্ষকেই গালাগালি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় । ধর্ম নিয়ে দু’পক্ষের এই হানাহানি , বিরােধ বুড়ির কাছে হাস্যকর মনে হয় । বুড়ির এই চরিত্রবৈশিষ্ট্য , মনােভাবের মধ্য দিয়ে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরেছেন এই গল্পে । এই গল্পের মূল । বক্তব্যই হলাে কুসংস্কারাচ্ছন্ন , ধর্মনির্ভর কুৎসিত মানুষগুলির কাছে মানবিক সম্পর্কের চেয়ে ধর্মীয় সংস্কারই প্রধান আর বুড়ির ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানসিকতার । জোরে সেই বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার কাহিনি । ফলে গল্পটিতে শেষপর্যন্ত লেখক আমাদের নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে ।
11.“ বুড়ি , তুমি হিন্দু না মুসলমান ? ” – উক্তিটি কার ? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উদ্ধৃতাংশটিতে বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তির যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে , তা নিজের ভাষায় লেখাে ।
Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ভারতবর্ষ গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধাকে মৃতদেহ মনে করে হিন্দু – মুসলমানের মধ্যে উত্তেজনা রহস্যময় হয়ে উঠেছিল । এই দুই সম্প্রদায়ের লােকেরাই আলােচ্য উক্তিটি করেছে ।
আলােচ্য গল্পে এক পরিচয়হীন মলিনবস্ত্র পরিহিত দরিদ্র বৃদ্ধা পৌষের শীতে ঝড়বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পিচের সড়কের বাঁকে ছােটো বাজারের রাস্তায় এসে শেষে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে নিঃসাড় হয়ে যায় । গ্রামের হিন্দুরা বুড়ি মারা গেছে ভেবে চৌকিদারের পরামর্শে নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে আসে । আবার গ্রামের মুসলমানরা বুড়িকে মুসলমান সাব্যস্ত করে কবর দেওয়ার জন্য তুলে আনে । বুড়ির এই ধর্মপরিচয় নিয়েই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তিটি করা হয়েছে ।
আলােচ্য উক্তিটিতে লেখকের গভীর মানসিকতা ধরা পড়েছে । লেখক এখানে সাম্প্রদায়িক মনােভাবকে দূর করে মানবিকতাকে বড়াে করে তুলেছেন । লেখকের বক্তব্য মানুষের ধর্মীয় পরিচয় মানুষের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না , মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব , বিবেক তার শ্রেষ্ঠ পরিচয় । মানুষের গায়ে হিন্দু – মুসলমান বলে কিছু লেখা থাকে না , তার পরিচয় সে মানুষ । সংজ্ঞাহীন বৃদ্ধাকে মারমুখী জনতা নিজ নিজ ধর্মের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলে লেখক বৃদ্ধার মুখ দিয়ে মানুষের মানবিক পরিচিতিকেই বড়াে করে তুলেছেন ।
12.ছোটোগল্প হিসেবে ‘ভারতবর্ষ’-এর সার্থকতা বিচার করো।
Ans. ছোটোগল্প হিসেবে ‘ভারতবর্ষ’-এর সার্থকতা: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোটোগল্প ‘ভারতবর্ষ’-এ পৌষের অকাল-দুর্যোগে রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট বাজারের পাশের বটগাছতলায় আশ্রয় নেয় পরিচয়হীন এক থুথুড়ে বুড়ি ভিখিরি। দুর্যোগ কাটলে সেখানে নিস্পন্দ হয়ে পড়ে থাকা বৃদ্ধাকে হিন্দু গ্রামবাসীরা মৃত ভাবে। চৌকিদারের পরামর্শে তারা বুড়ির মৃতদেহকে বাঁশের মাচায় করে নিয়ে গিয়ে শুকনো নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। কিন্তু সেদিন বিকেলেই মুসলমানরা সেই মাচায় করেই বুড়ির দেহটা কবর দিতে বাজারে নিয়ে আসলে সেই শবের অধিকার নিয়ে দু-সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধে। এর মধ্যে হঠাৎই দু-দলের সশস্ত্র জনতাকে হতচকিত করে বুড়ি জেগে উঠে দাঁড়ায়। একজন বুড়ির ধর্মপরিচয় জানতে চাইলে ক্রুদ্ধ বুড়ি তাদের গাল দেয়, নড়বড় করতে করতে রাস্তা ধরে চলতে থাকে এবং ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যায়।
গ্রামসংলগ্ন বাজারকে কেন্দ্র করেই এ গল্পের দু-দিনের এই কাহিনি গড়ে উঠেছে বলে স্থান-কাল-ঘটনাগত ঐক্য এ গল্পে রক্ষিত হয়েছে। তা ছাড়া মাঝারি আয়তনের এ গল্পে ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, ‘বহু চরিত্রের সমাবেশ’, ‘তত্ত্ব’ বা ‘উপদেশ’ অনুপস্থিত। এ গল্পের বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক ভারতমাতার প্রাচীনত্ব, দারিদ্র্য এবং অসহায়তা যেমন প্রকাশ করেছেন, তেমনই এদেশ যে শুধুমাত্র হিন্দু বা মুসলমানের নয়, বরং আপামর ভারতবাসীর সেই সত্যও উন্মোচিত করেছেন। গল্পের সমাপ্তিতে বৃদ্ধার জেগে ওঠার মাধ্যমে লেখক পাঠকদের চমকিতও করে দিয়েছেন। সুতরাং ‘ভারতবর্ষ’ নিঃসন্দেহে একটি শিল্পসার্থক ছোটোগল্প।
HS Bengali Suggestion 2022 –ভারতবর্ষ (সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) গল্প প্রশ্ন উত্তর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
“HS Bengali Suggestion 2022 – ভারতবর্ষ (সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ) গল্প প্রশ্ন উত্তর” একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক উচ্চমাধ্যমিক বাংলা (Hs Bengali Suggestion / Hs Bengali Suggestion 2022 / Hs Bengali Suggestion 2022 all / Hs Bengali Suggestion 2022 answers / Hs Bengali Suggestion 2022 bangla / Hs Bengali Suggestion 2022 bengali / Hs Bengali Suggestion 2022 bengali pdf / Hs Bengali Suggestion 2022 board / Hs Bengali Suggestion 2022 class 12 / Hs Bengali Suggestion 2022 in bengali / Hs Bengali Suggestion 2022 in west bengal / Hs Bengali Suggestion 2022 question and answer ) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Studywithgenius.in এর পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন প্রদানের প্রচেষ্টা করা হলাে।
ছাত্রছাত্রী এবং পরীক্ষার্থীদের উপকারের জন্য, আমাদের প্রয়াস উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন (Hs Bengali Suggestion / Hs Bengali Suggestion 2022 / Hs Bengali Suggestion 2022 all / Hs Bengali Suggestion 2022 answers / Hs Bengali Suggestion 2022 bangla / Hs Bengali Suggestion 2022 bengali / Hs Bengali Suggestion 2022 bengali pdf / Hs Bengali Suggestion 2022 board / Hs Bengali Suggestion 2022 class 12 / Hs Bengali Suggestion 2022 in bengali / Hs Bengali Suggestion 2022 in west bengal / Hs Bengali Suggestion 2022 question and answer ) সফল হবে।
© StudywithGenius.in
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই আমাদের Studywithgenius.in ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। সমস্ত বিষয়ে যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করুন এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন , ধন্যবাদ।