WBBSE Madhyamik History Suggestion 2022 (NEW Syllabus)- প্রথম অধ্যায়ঃ ইতিহাসের ধারণা | Chapter Wise Suggestion, PDF Download
মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২(2022) | দশম শ্রেণীর ইতিহাস – প্রথম অধ্যায়ঃ “ইতিহাসের ধারণা” প্রশ্ন উত্তর
Madhyamik History Suggestion 2022 ” মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রথম অধ্যায়ঃ” ইতিহাসের ধারণা “MCQ প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik / WB Madhyamik / MP Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE Madhyamik Exam / Madhyamik Bengali Suggestion 2022 / Madhyamik Class 10th / Class X / Madhyamik Pariksha) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে StudywithGenius.in এর পক্ষ থেকে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন (Madhyamik History Suggestion 2022 / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE History Suggestion / Madhyamik Class 10th History Suggestion / Class X History Suggestion / Madhyamik Pariksha History Suggestion / History Madhyamik Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Madhyamik History Suggestion 2022 FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন সফল হবে।
Madhyamik History Suggestion 2022
Madhyamik History Suggestion 2022 (মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২) –প্রথম অধ্যায়ঃ “ইতিহাসের ধারণা” প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এই Madhyamik History Suggestion 2022 (মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন) –প্রথম অধ্যায়ঃ “ইতিহাসের ধারণা” MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর গুলি আগামী সালের পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। আপনারা যারা মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ইতিহাস 2022 পরীক্ষার সাজেশন খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্নপত্র ভালো করে পড়তে পারেন। এই পরীক্ষা তে কোশ্চেন গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
বহুবিকল্পীয় প্রশ্ন (প্রশ্নমান – ১): প্রথম অধ্যায়ঃ "ইতিহাসের ধারণা" প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২ – Madhyamik History Suggestion 2022
Time's up
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (প্রশ্নমান – ১): প্রথম অধ্যায়ঃ "ইতিহাসের ধারণা" প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২ – Madhyamik History Suggestion 2022
1. ‘ইতিহাসের জনক’ কাকে বলা হয়?
উত্তর: ইতিহাসের জনক’ বলা হয় হেরোডোটাসকে।
2. ‘আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক’ কাকে বলা হয় ?
উত্তর: ‘আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের জনক’ বলা হয় লিওপোল্ড ভন র্যাঙ্কে-কে।
3. ইতিহাসবিদ্যাকে অন্যান্য বিদ্যাচর্চার জননী’ বলে কে অভিহিত করেছেন?
উত্তর: ইতিহাসবিদ্যাকে অন্যান্য ‘বিদ্যাচর্চার জননী’ বলে অভিহিত করেছেন জি এম ট্রেভেলিয়ান।
4. কয়েকজন জাতীয়তাবাদী ভারতীয় ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর: কয়েকজন জাতীয়তাবাদী ভারতীয় ঐতিহাসিক হলেন যদুনাথ সরকার, ড. তারাচাঁদ, রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিশ্বেশ্বর প্রসাদ প্রমুখ।
5. সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার কয়েকজন ঐতিহাসিক হলেন রুডিয়ার্ড কিপলিং, জেমস মিল, উইলিয়ম হান্টার, ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথ প্রমুখ।
6. কয়েকজন কেমব্রিজ ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর: কয়েকজন কেমব্রিজ ঐতিহাসিকের নাম হল — জন গ্যালাহার, গর্ডন জনসন, অনিল শীল, ফ্রান্সিস রবিনসন প্রমুখ।
7. কয়েকজন মার্কসবাদী ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর: কয়েকজন মার্কসবাদী ঐতিহাসিক হলেন মরিস ডব, ক্রিস্টোফার হিল, রজনীপাম দত্ত, এস এন রায়, বিপানচন্দ্র, সুমিত সরকার প্রমুখ।
8. ‘দ্য অ্যানালস্’ পত্রিকাটি কবে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ‘দ্য অ্যানালস্’ পত্রিকাটি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
9. বাংলায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব’ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: বাংলায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
10. প্রথম কে ‘স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন?
উত্তর: নবীনচন্দ্র দাস প্রথম ‘স্পঞ্জ রসগোল্লা’ তৈরি করেন।
11. ‘রসগোল্লা বাংলার জগৎ মাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন ?
উত্তর: ‘রসগোল্লা বাংলার জগৎ মাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থটি রচনা করেন হরিপদ ভৌমিক।
12. কাদের মাধ্যমে আলু ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় স্থান পায় ?
উত্তর: পোর্তুগিজদের মাধ্যমে আলু ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় স্থান পায়।
13. বাংলায় কীর্তনের প্রবক্তা কে ছিলেন?
উত্তর: বাংলায় কীর্তনের প্রবক্তা ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব।
14. কথাকলি নৃত্যশৈলীর উৎপত্তিস্থল কোন্ রাজ্য?
উত্তর: কথাকলি নৃত্যশৈলীর উৎপত্তিস্থল হল কেরল।
15. কুচিপুড়ি নৃত্যশৈলীর উৎপত্তিস্থল কোন্ রাজ্য?
উত্তর: কুচিপুড়ি নৃত্যশৈলীর উৎপত্তিস্থল হল অন্ধ্রপ্রদেশ।
16. ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নাট্যকার কে ছিলেন?
উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নাট্যকার ছিলেন উৎপল দত্ত।
17. উৎপল দত্তের কয়েকটি বিখ্যাত নাটকের নাম লেখো।
উত্তর: উৎপল দত্তের কয়েকটি বিখ্যাত নাটকের নাম হল – টিনের তলোয়ার, কল্লোল, ফেরারী ফৌজ ইত্যাদি।
18. কোথায় চলচ্চিত্রের জন্ম হয় ?
উত্তর: প্যারিসে চলচ্চিত্রের জন্ম হয়।
19. প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের নাম কী?
উত্তর: প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের নাম বিল্বমঙ্গল।
20. প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্রের নাম কী?
উত্তর: প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্রের নাম হল জামাইষষ্ঠী (১৯৩১খ্রি)।
21. ‘পথের পাঁচালী’ কত খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভ করে?
উত্তর: ‘পথের পাঁচালী’ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভ করে।
22. ‘একেই বলে শুটিং’ – কার লেখা?
উত্তর: ‘একেই বলে শুটিং’ সত্যজিৎ রায়ের লেখা।
23. চিপকো আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
উত্তর: চিপকো আন্দোলনের নেতা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা।
24. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেত্রী ছিলেন মেধা পাটেকর।
25. কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
26. বোস ইনস্টিটিউট কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: বোস ইনস্টিটিউট ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
27. ‘সায়েন্স অ্যান্ড দ্য রাজ’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর: ‘সায়েন্স অ্যান্ড দ্য রাজ’ গ্রন্থটি দীপক কুমারের লেখা।
28. সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম হল ‘জীবনের ঝরাপাতা’।
29. ইন্দিরাকে লেখা জওহরলালের চিঠিপত্রের হিন্দি অনুবাদ কে করেন?
উত্তর: ইন্দিরাকে লেখা জওহরলালের চিঠিপত্রের হিন্দি অনুবাদ করেন মুনসি প্রেমচন্দ।
30. ভারতে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্রের নাম কী?
উত্তর ভারতে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্রের নাম হল বেঙ্গল গেজেট।
31. প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের নাম কী?
উত্তর: প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের নাম হল সমাচার দর্পণ।
32. ‘বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর: ‘বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র প্রবর্তন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে)।
33. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (প্রশ্নমান – ২): প্রথম অধ্যায়ঃ "ইতিহাসের ধারণা" প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২ – Madhyamik History Suggestion 2022
1. সামাজিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?
উত্তর: সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্ব :
[1] সামাজিক ইতিহাসচর্চা সামগ্রিকভাবে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্র ও জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েছে। গৃহভিত্তিক বিষয়, গণসংস্কৃতি, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী, নারীসমাজের কথা এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
[2] শ্রেণি, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, সামাজিক চলমানতা প্রভৃতির উপর সামাজিক ইতিহাস আলোকপাত করে।
আধুনিক ইতিহাসচর্চায় নানা বিষয়ের ইতিহাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত বিষয়গুলিকে আলোকিত করে তোলা হয়।
2.ইতিহাসের উপাদান হিসেবে নাটক ও চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী?
উত্তর: ইতিহাস রচনার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে নাটক ও চলচ্চিত্র অন্যতম হলেও তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষণীয়।
সীমাবদ্ধতা :
[1] কাল্পনিক কাহিনি : ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত নাটক ও চলচ্চিত্রে অনেক সময় কাল্পনিক চরিত্র ও কাহিনি সংযোজিত হয়।
[2] বিকৃতি : নাটক ও চলচ্চিত্রে অনেক সময় প্রকৃত তথ্য বা সত্য ঘটনাকে বিকৃত করা হয়।
[3] ব্যক্তিগত মতামত : নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতার ব্যক্তিগত মতামত, ভাবনাচিন্তা তাদের সৃষ্টির মধ্যে প্রতিফলিত হয়। ইতিহাস রচনার জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হয়। নাটক ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে তার অভাব থাকে।
3. আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রধান প্রধান উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর: আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়।
উপাদানসমূহ : আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ব্যবহৃত উপাদানগুলি হল— সরকারি নথিপত্র, ও আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, © চিঠিপত্র, 4 সাময়িক পত্রপত্রিকা ইত্যাদি।
এই উপাদানগুলির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কারণ— এই সকল উপাদানগুলির মধ্যে আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত মনোভাবের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।
4. সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সরকারি নথিপত্রসমূহ: যেসব তথ্যের সাহায্য নিয়ে ইতিহাস লেখা হয়, তাকে ইতিহাসের উপাদান বলে। আধুনিক ইতিহাসের উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হল সরকারি নথিপত্র। সরকারি নথিপত্র বলতে বোঝায় পুলিশ, গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট, প্রতিবেদন, চিঠিপত্র ইত্যাদি।
সরকারি নথিপত্রের বিবরণ: সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সচিব ও আধিকারিকরা সরকারি কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন চিঠিপত্র লেখেন, রিপোর্ট ও নোট দেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র থেকে ইতিহাসের অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।
5. ‘Right to Information Act’ বা ‘তথ্য জানার অধিকার আইন’ কী?
উত্তর ভারতীয় সংবিধান তার জনগণকে বিভিন্ন অধিকার দান করেছে। তার মধ্যে তথ্য জানার অধিকার আইন বা Right to Information Act (2005) হল অন্যতম।
তথ্য জানার অধিকার আইন : ভারত সরকার এই আইন পাস করে জনগণকে তথ্য জানার অধিকার দান করেছে। এর দ্বারা যে-কোনো ব্যক্তি যে-কোনো বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। সরকার জনগণকে তথ্য জানাতে বাধ্য হয়।
6. স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?
অথবা, আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠে? কয়েকটি ইতিহাস সহায়ক আত্মজীবনীর উদাহরণ দাও।
উত্তর: ইতিহাসের উপাদানরূপে স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী:
অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো ব্যক্তি পরবর্তীকালে তার স্মৃতি থেকে প্রাপ্ত অতীত ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে অথবা মৌখিকভাবে প্রকাশ করলে, তাকে বলা হয় স্মৃতিকথা (Memoir)। অপরদিকে আত্মজীবনী (Autobiography) হল এক ধরনের অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্য, যেখানে রচয়িতা নিজের জীবন ও সমকালীন বিভিন্ন ঘটনাবলির বিবরণী পেশ করেন। যে-কোনো সধর্মী স্মৃতিকথা কিংবা আত্মজীবনীতেই ব্যক্তিজীবনের আখ্যানের সঙ্গে বলির জড়িয়ে থাকে বিশেষ এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনা ও রাষ্ট্রের আখ্যান। এই কারণেই সেগুলি হয়ে ওঠে ইতিহাসের উপাদান।
ইতিহাস সহায়ক বিভিন্ন স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীর মধ্যে বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ বীণা দাসের ‘শৃঙ্খল ঝংকার’, বুদ্ধদেব বসুর ‘আমার জীবন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
7. কে, কেন ‘বীরাষ্টমী ব্রত’ পালন করেন ?
উত্তর: সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবনের ঝরাপাতা থেকে উনিশ শতকের শেষ দুই দশক এবং বিশ শতকের প্রথম কয়েক বছরের বাংলা তথা ভারতের কথা জানা যায়।
‘বীরাষ্টমী ব্রত’ পালন : সরলাদেবী চৌধুরাণীর উদ্যোগে বীরাষ্টমী ব্রত পালিত হয়। এই ব্রতের মূল উদ্দেশ্য ছিল শরীরচর্চা, আত্মশক্তির বিকাশ, হীনম্মন্যতা দূরীকরণের মাধ্যমে জাতীয় মানসিকতার জাগরণ ঘটানো ইত্যাদি।
8. ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী ?
উত্তর: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
গুরুত্ব:
[1] তৎকালীন সমাজচিত্র : সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তৎকালীন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। যেমন—‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় নীল কৃষকদের প্রতি ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা প্রকাশ করা হত। বিধবাবিবাহ আন্দোলন সম্পর্কেও ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
[2] জনমত গঠন : দেশে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠন করতে সংবাদপত্র অদ্বিতীয়।
9. কোন্ সময়কে কেন ‘বঙ্গদর্শনের যুগ’ বলা হয়?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
‘বঙ্গদর্শনের যুগ’ বলার কারণ :
[1] ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই কালপর্ব ‘বঙ্গদর্শনের যুগ’ নামে পরিচিত।
[2] ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা বাঙালি জাতির মধ্যে স্বদেশচেতনার সার করে। এই পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি প্রথম প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তীকালে বাঙালি তথা ভারতীয় বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।
10. নীল বিদ্রোহের ক্ষেত্রে ‘‘সোমপ্রকাশ’ কী ভূমিকা নিয়েছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তীব্র বিরোধী পত্রিকা হিসেবে সোমপ্রকাশ কৃষকদের চেতনা জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
নীল বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সেমিপ্রকাশের ভূমিকা : নীলকর সাহেব এবং জমিদারবিরোধী তীব্র জনমত গঠন করে পত্রিকাটি এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চাহিদা পূরণ করেছিল। নীল কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রেভারেন্ড জেমস লং পত্রিকাটির নানা সংবাদের কাটিং জমা দিয়েছিলেন। তিনি যথার্থই বলেছিলেন, ‘নীলবিদ্রোহের সময়পর্বে সোমপ্রকাশ হয়ে উঠেছিল ভারতীয় জনসমাজের মুখপত্র।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন (প্রশ্নমান – ৪ ): প্রথম অধ্যায়ঃ "ইতিহাসের ধারণা" প্রশ্ন উত্তর – মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২ – Madhyamik History Suggestion 2022
1. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
উত্তর: ইতিহাস লেখার জন্য বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতে হয়। তার মধ্যে লিখিত উপাদান হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত উপাদানের মধ্যে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায় । তৎকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাই এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম
আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা : আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলিও এক ধরনের সাহিত্য। লেখক তার চোখে দেখা বিভিন্ন ঘটনা ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা এই জীবনীগ্রন্থে প্রকাশ করেন। প্রত্যেক আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় লেখকের ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পরিচয় ফুটে ওঠে। আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ও পাওয়া যায় লেখাগুলি থেকে। লেখকের ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি বর্তমানের নিরিখে যাচাই করা হয়। আদর্শগত মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লেখকের নিজের চোখে দেখা সেকাল ও একালের ব্যবধান বর্ণিত হয় এই সমস্ত লিখিত উপাদানে।
ইতিহাসে আমরা বহু জীবনচরিত, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার 2 শি পরিচয় পাই। এই গ্রন্থগুলির বেশিরভাগই শাসকদের জীবনীগ্রন্থ। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে কোনোটি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত, আবার কোনোটি শাসকদের স্বরচিত। আধুনিককালে সাধারণ ব্যক্তিরাও শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে লেখালেখির কাজে যুক্ত হন। তাদের অনেকে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা লেখেন। তাই সাধারণ মানুষের চোখে দেখা ঘটনার বিবরণী ও তার অভিজ্ঞতার কথা এই উপাদান থেকে পাওয়া যায়।
গুরুত্ব : আধুনিক ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব যথেষ্ট—
[1] সাধারণ মানুষের কথা, লেখকের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, কোনো কোনো ঘটনার বিবরণী প্রভৃতি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তথ্যের জোগান দেয়।
[2] রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নধর্মী ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
[3] স্থানীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই উপাদান সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
[4] বৃহত্তর বা জাতীয় ইতিহাসের বহু উপেক্ষিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করে।
2. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’-কে কেন ইতিহাসের উপাদানরূপে গণ্য করা হয়? অথবা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে কীভাবে ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায় ?
উত্তর: ভূমিকা: ‘জীবনস্মৃতি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা স্মৃতিকথামূলক একটি গ্রন্থ। ‘জীবনস্মৃতি’ লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘জীবনস্মৃতি’ জীবনের ইতিহাস লেখা নয়। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন এটি তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থের মতো লেখা গ্রন্থ নয়— এটি তাঁর স্মৃতি রোমন্থন করে লেখা। তাই আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রকাশকাল ও পত্রিকা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ ১৩১৯ বঙ্গাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তার আগে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ভাদ্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ থেকে শ্রাবণ, ১৩১৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
‘জীবনস্মৃতি’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য : ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল— ‘শিক্ষারম্ভ’, ‘ঘর ও বাহির’, ‘ভৃত্য-রাজকতন্ত্র’, ‘কবিতা রচনারম্ভ’, ‘স্বাদেশিকতা’, বংশলতিকা-সহ ৪৫টি লেখা (topic)।
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল : ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তথা ঠাকুর পরিবারের শিশুদের ছেলেবেলা, তাদের শিক্ষালাভ, সংগীতচর্চা প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তা ছাড়া ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের বিভিন্ন অবস্থা, নারীদের কথা, পুরুষের অবস্থা, ভৃত্যদের কাজকর্ম, উৎসব-অনুষ্ঠান, অতিথি অভ্যর্থনা প্রভৃতি সম্পর্কেও জানা যায়।
[2] বাঙালি সমাজে জাতীয় চেতনার প্রসার : এই গ্রন্থ থেকে বাঙালি সমাজে জাতীয় চেতনার প্রসারের কথা জানা যায়। বাঙালি সমাজে এই সময়কালে স্বদেশি ভাবধারার প্রসার ঘটে। বাঙালিরা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণের পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও অনুরাগ দেখায়।
[3] বাঙালির স্বাদেশিকতা : এই গ্রন্থ থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ও রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বাদেশিকতার সভা সম্পর্কে মূল্যবান বহু তথ্য পাওয়া যায়। নবগোপাল মিত্রের হিন্দুমেলা এবং স্বদেশি কাপড়, স্বদেশি দেশলাই প্রভৃতি সম্পর্কে যুবসমাজের উদ্যোগ বিষয়ে বিভিন্ন কথা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।
[4] রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক যোগ: ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিস্তৃত বিবরণ দেননি। তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দেশাত্মবোধক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন বলে এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়।
উপসংহার : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “এই স্মৃতির ভাণ্ডারে অত্যন্ত যথাযথরূপে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে।” তিনি এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও আধুনিক ইতিহাসচর্চায় তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’র গুরুত্ব অপরিসীম।
3. আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা : সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র আধুনিক ভারত ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক উপাদান রূপে স্বীকৃত। উনিশ শতক থেকে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রিকার বিকাশ ভারত ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে।
সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের গুরুত্ব: সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল—
[1] সমকালীন ঐতিহাসিক তথ্য : সমকালীন ঐতিহাসিক তথ্য সম্পর্কে জানতে এই পত্রপত্রিকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জোগান দেয় সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলি।
[2] ব্রিটিশ সরকারের শোষণের কদর্য রূপ : উনিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারী ভাবমূর্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল এই চড়া সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রিকাগুলিতে। এ প্রসঙ্গে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার কথা বলা যায়। বাংলার নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার, দরিদ্র সাঁওতালদের উপর ইংরেজদের উৎপীড়ন এই পত্রিকায় তুলে ধরা হয়।
[3] জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার বিকাশ : সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রগুলিতে ব্রিটিশ সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলনের খবর প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হত। যেমন— ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা থেকে ‘দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনবিরোধী’, ‘ইলবার্ট বিল’-সংক্রান্ত ভারতীয়দের আন্দোলন ইত্যাদি খবর প্রকাশিত হত। এগুলি ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যবোধ ও জাতীয়তাবোধের বিস্তারে সহায়ক ছিল।
[4] জনমত গঠন : জনমত গঠনেও সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রিকাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এগুলিতে সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলন, সমাজসংস্কার, সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটত। এ ছাড়া সিপাহি বিদ্রোহ সম্পর্কে শিক্ষিত বাঙালির বিরূপ মনোভাব বা নীলবিদ্রোহ বিষয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালির সমর্থন ও সহযোগিতা প্রভৃতি পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন দিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
4. ‘বঙ্গদর্শন’ ও ‘সোমপ্রকাশ’ থেকে কোন্ ধরনের ইতিহাস রচনার উপাদান পাওয়া যায় ? অথবা, ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘বঙ্গদর্শন’ এবং ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা দুটির মূল্যায়ন করো।
উত্তর: ভূমিকা : ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে লিখিত উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। লিখিত উপাদান বিভিন্ন রকমের হয়। সাময়িক পত্রপত্রিকা হল লিখিত উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম। এই উপাদান থেকে সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের নানান প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।
বঙ্গদর্শন ও সোমপ্রকাশ : বঙ্গদর্শন ও সোমপ্রকাশ ছিল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত দুটি সাময়িক পত্রিকা। এই পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলাদেশের বহু তথ্য পাওয়া যায়।
[1] বঙ্গদর্শন : ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশ করেন। মূলত এই পত্রিকাটি সাহিত্যধর্মী হলেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তাবাদী উপাদানে পরিপূর্ণ ছিল। এই পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর বিষবৃক্ষ ও ইন্দিরা উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন। সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই পত্রিকায় লিখতেন। এই পত্রিকায় বাংলা ভাষার রূপান্তর, বিবর্তন ও পরিপূর্ণতা লক্ষ করা যায়। জাতীয়তাবাদী ক্ষেত্রে হিন্দু জাগরণের ধারক ও বাহক ছিল এই পত্রিকা। এই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বন্দেমাতরম’ সংগীত বিপ্লবীদের মন্ত্রস্বরূপ ছিল। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, সংগীত, বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করেছিল বলা যায়।
উপাদানগত মূল্য : বঙ্গদর্শন থেকে উপাদান সংগ্রহ করে সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার বিবর্তনের দিকগুলিকে বোঝা যেতে পারে। বাংলা ভাষাতাত্ত্বিক বিবর্তন এবং সম্পাদক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের বিভিন্ন বিষয়ে মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও জানা সম্ভবপর হয়। এ ছাড়া উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেও বঙ্গদর্শনকে গণ্য করা যেতে পারে।
[2] সোমপ্রকাশ : ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সম্পাদনায় সোমপ্রকাশ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। জনকল্যাণ এই পত্রিকার আদর্শ ছিল। রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন লেখা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিশেষত বিধবাবিবাহ আন্দোলন, ভারতে নারীশিক্ষার প্রসার, শিল্পায়ন, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ, মহারানির ঘোষণাপত্র, নীলচাষিদের আন্দোলন, জমিদারি ব্যবস্থার কুফল, ইলবার্ট বিল সমর্থন, জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত, দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনের বিরোধিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই পত্রিকায় লেখা হত।
উপাদানগত মূল্য : ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা ভারতীয় সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। এই পত্রিকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন নিয়ে সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। সমসাময়িক বাংলার রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাস রচনার আকর উপাদান হিসেবে এই পত্রিকাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে ধ্যানধারণার পরিবর্তনের ইতিহাস গবেষণার ক্ষেত্রে এই পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত উপাদানকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মূল্যায়ন : ‘বঙ্গদর্শন’ ও ‘সোমপ্রকাশ’ এই দুটি পত্রপত্রিকার উপাদানগত মূল্য বিচারের পর বলা যায় আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এগুলি হল এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রথমত, তারা সেইসব রাজনৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধগুলি নথিবদ্ধ করে যেগুলি সেই সময় প্রভাবশালী ছিল। দ্বিতীয়ত, সংবাদপত্রগুলি দৈনন্দিন বা সাপ্তাহিক ঘটনাবলির বিবরণ দেয়।
5. ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা : কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট বলা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। তাই বর্তমান যুগকে ‘তথ্য-বিস্ফোরণের যুগ’ বলা হয়। ইন্টারনেটের সাহায্যে ইতিহাসের অনেক তথ্য পাওয়া যায় তবে ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন সুবিধা আছে তেমনি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
সুবিধাসমূহ :
[1] তথ্যের সহজলভ্যতা : ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে দেশ-দুনিয়ার অসংখ্য তথ্য নিমেষের মধ্যে জানা যায়। ইন্টারনেট থেকে সহজে বহু তথ্যসংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করা যায়।
[2] সহজে মূল তথ্য ও ছবি সংগ্রহ : ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন বিষয়ের মূল তথ্য ও তার ছবি পাওয়া যায়, যার ফলে বিশেষ বিষয় সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয়। ‘অনলাইন লাইব্রেরি’ ও ‘আর্কাইভ’ থেকে আসল বই ও রিপোর্টের কপি পাওয়া যায়।
[3] সময় সাশ্রয় : বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বই বা অন্য উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহ করা প্রচুর সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইন্টারনেটের সাহায্যে অল্প সময়ে প্রচুর তথ্যসংগ্রহ করা যায়।
[4] কম খরচে তথ্যসংগ্রহ : ইন্টারনেটের সাহায্যে কম খরচে অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। বই কিনে বা অন্যভাবে তথ্যসংগ্রহ করা অনেক বেশি ব্যয়বহুল।
অসুবিধাসমূহ: তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
[1] প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার অভাব : ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য কতটা নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য তা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে নিজের মনগড়া বা বিকৃত তথ্য সংযোজন (upload) করে থাকে।
[2] পরস্পরবিরোধী তথ্য : ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে (website) একই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ও পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়, যে তথ্যগুলি ইতিহাস রচনায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
[3] তথ্যের অসম্পূর্ণতা : অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর আংশিক তথ্য পাওয়া যায়। তা ছাড়া সব বিষয়ের সঠিক তথ্যও অনেকসময় পাওয়া যায় না।
[4] যন্ত্ৰ-প্রযুক্তিগত অসুবিধা : ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন যন্ত্র-প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন, যা সবসময় সব জায়গায় পাওয়া সম্ভব নয়।
উপসংহার : তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট বিশেষভাবে সহায়ক। কিন্তু এই ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত নয়। ইন্টারনেট থেকে তথ্যসংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করতে গেলে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য যতটা সম্ভব মূল নথি বা উৎসের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া উচিত। তবেই প্রকৃত ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হবে।
মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২২(2022) | দশম শ্রেণীর ইতিহাস – প্রথম অধ্যায়ঃ “ইতিহাসের ধারণা” প্রশ্ন উত্তর
Madhyamik History Suggestion 2022 ” মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রথম অধ্যায়ঃ” ইতিহাসের ধারণা “MCQ প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik / WB Madhyamik / MP Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE Madhyamik Exam / Madhyamik Bengali Suggestion 2022 / Madhyamik Class 10th / Class X / Madhyamik Pariksha) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে StudywithGenius.in এর পক্ষ থেকে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন (Madhyamik History Suggestion 2022 / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE History Suggestion / Madhyamik Class 10th History Suggestion / Class X History Suggestion / Madhyamik Pariksha History Suggestion / History Madhyamik Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Madhyamik History Suggestion 2022 FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন সফল হবে।
West Bengal Best Suggestion for Madhyamik History 2022