সমাস - উদাহরণ সহ সমাসের শ্রেণীবিভাগ | বাংলা ব্যাকরণ | Bangla Samas PDF Download
( সমাস – উদাহরণ সহ সমাসের শ্রেণীবিভাগ , বাংলা সমাস pdf, সমাস in bangla, সমাস in ব্যাকরণ, সমাস এর mcq, সমাস ও তার প্রকারভেদ, সমাস ও তার শ্রেণীবিভাগ, সমাস ও সন্ধির পার্থক্য, সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য কি, সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য লেখ, সমাস কত প্রকার, সমাস কাকে বলে, সমাস কাকে বলে pdf, সমাস চেনার সহজ উপায়, সমাস নির্ণয়ের কৌশল pdf, সমাস নির্ণয়ের সহজ উপায় pdf, সমাস শব্দের অর্থ কি )
সমাস - উদাহরণ সহ সমাসের শ্রেণীবিভাগ | বাংলা ব্যাকরণ | Bangla Samas PDF Download
সমাস – উদাহরণ সহ সমাসের শ্রেণীবিভাগ :
1. সমাস কাকে বলে?
উত্তর: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার মধ্যে একটি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, নীল যে উৎপল =নীলোৎপল।
2. সমাস শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – “এক হওয়া’ বা সংক্ষেপ। সমাসের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।
3. সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য:
সন্ধির ক্ষেত্রেও দুই বা তার বেশি শব্দ জুড়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। কিন্তু সন্ধি ও সমাস এক নয়। কেন, তা আমরা সন্ধি-সমাসের মধ্যে পার্থক্যের মাধ্যমে বুঝে নেবো।
সন্ধি | সমাস |
1.বর্ণের সঙ্গে বর্ণের বা ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির মিলনে সন্ধি হয়। যেমন-গ্রন্থ + আগার = গ্রন্থাগার | 1.দুই বা ততোধিক শব্দের অর্থগত মিলনে হয় সমাস। যেমন- আমি, তুমি ও সে = আমরা |
2.সন্ধিতে একটি পদের অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে। | 2.সমাসে দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়া তা নাও থাকতে পারে। |
3.পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় না। | 3.অলুক সমাস বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভক্তি লোপ পায়। |
4.পদক্রম অক্ষুণ্ণ থাকে। | 4.কখনও কখনওপদগুলি পরস্পর স্থান পরিবর্তন করে। |
5.বহিরাগত অন্য শব্দের ব্যবহার হয় না। | 5.সমাসের প্রয়োজনে অন্য শব্দ আসতে পারে। যেমন অন্য গ্রাম = গ্রামাত্তর |
6.অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে। | 6.অর্থের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেমন-বীণা পাণিতে যাহার = বীণাপানি। যার মানে সরস্বতীকে বোঝায়। |
4. সমস্যামান পদ : যে সব পদ নিয়ে একটি সমাসবদ্ধ পদ সৃষ্টি হয়, সেই পদগুলিকে বলা হয় ‘সমস্যমান পদ’।
যেমন— নীল যে উৎপল নীলোৎপল এখানে ‘নীল’, ‘যে’ এবং ‘উৎপল’, এই তিনটি হল ‘সমস্যমান পদ’। যে দুটি পদের মধ্যে সমাস হয়, তার প্রথমটিকে পূর্বপদ ও পরের পদটিকে পরপদ বা উত্তর পদ বলে।
5. ব্যাসবাক্য : সমস্যামান পদগুলিকে নিয়ে যে বাক্যটি তৈরি হয়, তাকে বলে ‘ব্যাসবাক্য’ বা ‘বিগ্রহবাক্য। এই বাক্যের দ্বারা সমাসবদ্ধ পদটির অর্থকে বোঝানো হয়।
যেমন— নীল যে উৎপল = নীলোৎপল নীল যে উত্পল, এই তিনটি সমস্যমান পদকে নিয়ে একটি ব্যাসবাক্য সৃষ্টি হয়েছে।
6. সমাসবদ্ধ পদ : ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থ একাধিক সমস্যমান পদ মিলিত হয়ে যে একটি পদের সৃষ্টি করে, তাকে বলে ‘সমস্ত পদ’ বা ‘সমাস নিষ্পন্ন পদ’ বা সমাসবদ্ধ পদ।
যেমন— নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। এখানে ‘নীলোৎপল’ হলো সমাসবদ্ধ পদ।
7. সমাসের শ্রেণিবিভাগ : যে পদগুলি নিয়ে সমাস তৈরি হয়, তার মধ্যের পূর্বপদ বা পরপদের প্রাধান্য অনুযায়ী সমাসের শ্রেণিবিভাগ হয়।
(১) পূর্বপদ প্রধান, পরপদ অপ্রধান – অব্যয়ীভাব সমাস
(২) পরপদ প্রধান, পূর্বপদ অপ্রধান – তৎপুরুষ সমাস
(৩) পূর্বপদ এবং পরপদ সমপ্রাধান্য –-দ্বন্দ্ব সমাস
(৪) পূর্বপদ, পরপদ কোনোটিই নয়, অন্যপদ প্রধান – বহুব্রীহি সমাস
যদিও বলা হয় সমাস ছয় প্রকার – (১) তৎপুরুষ সমাস (২) কর্মধারয় সমাস (৩) বহুব্রীহি সমাস (৪) দ্বন্দ্ব সমাস (৫) দ্বিগু সমাস এবং (৬) অব্যয়ীভাব সমাস কিন্তু বাংলা ব্যাকরণে ব্যাকরণবিদেরা অব্যয়ীভাব সমাসকে গুরুত্ব দেন না। তাই সেটি বাদে বাংলায় পাঁচ প্রকার সমাস রয়েছে। এছাড়াও নিত্য সমাস, অলোপ বা অলুক সমাস এবং বাক্যশ্রয়ী সমাস নামে আরও তিন প্রকার সমাসের কথাও বলা হয়েছে।
( সমাস – উদাহরণ সহ সমাসের শ্রেণীবিভাগ, বাংলা সমাস pdf, সমাস in bangla, সমাস in ব্যাকরণ, সমাস এর mcq, সমাস ও তার প্রকারভেদ, সমাস ও তার শ্রেণীবিভাগ, সমাস ও সন্ধির পার্থক্য, সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য কি, সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য লেখ, সমাস কত প্রকার, সমাস কাকে বলে, সমাস কাকে বলে pdf, সমাস চেনার সহজ উপায়, সমাস নির্ণয়ের কৌশল pdf, সমাস নির্ণয়ের সহজ উপায় pdf, সমাস শব্দের অর্থ কি )
তৎপুরুষ সমাস
তৎপুরুষ সমাস: যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণীবিভাগ:
সমাসবদ্ধ পদে বিভিন্ন কারকে লুপ্ত হওয়া বিভক্তি চিহ্ন অনুসারে তৎপুরুষ সমাসকে ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।
(১) কর্মতৎপুরুষ: ‘কে’, ‘রে’ ইত্যাদি বিভক্তি লোপের দ্বারা কর্ম তৎপুরুষ সমাস সৃষ্টি হয়।
যেমন— রথকে দেখা – রথদেখা , কলাকে বেচা – কলাবেচা।
পূর্বপদ কালবাচক, অবস্থাবাচক বিশেষণ বা ক্রিয়াবিশেষণ হলেও কর্ম তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন— চিরকাল ব্যাপী সবুজ – চিরসবুজ , দৃঢ়ভাবে বদ্ধ – দৃঢ়বদ্ধ
(২) করন তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদে করণ কারকের অর্থ প্রকাশিত হয়ে, ‘দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক’ বিভক্তি লোপে এই সমাস সৃষ্ট হয়।
যেমন— শ্রমের দ্বারা লব্ধ – শ্রমলব্ধ , দা দিয়ে কাটা – দাকাটা
(৩) নিমিত্ত তৎপুরুষ : নিমিত্তের বিভক্তি ‘কে’, ‘রে’ লুপ্ত হয়ে বা অনুসর্গ ‘উদ্দেশ্য’, ‘নিমিত্ত’, ‘জন্য’ ইত্যাদি পূর্বপদ থেকে লোপ পেয়ে এই সমাস গঠিত হয়।
যেমন– বিষ্ণুর নিমিত্ত মন্দির – বিষ্ণুমন্দির, তীর্থের জন্য যাত্রা – তীর্থযাত্রা
(৪) অপাদান তৎপুরুষ : অপাদান কারকের বিভক্তি ‘এ’, ‘তে লোপ পেয়েও ‘হইতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গ পূ বপদ থেকে লুপ্ত হয়ে এই সমাস গঠিত হয়।
যেমন— আকাশ হইতে বাণী – আকাশবাণী, শাপ থেকে মুক্ত- শাপমুক্ত
(৫) সম্বন্ধ তৎপুরুষ : সম্বন্ধ পদের বিভক্তি ‘র’, বা ‘এর’ পূর্বপদ থেকে লোপ পেয়ে এই সমাস গঠিত হয়।
যেমন- বিদ্যার সাগর – বিদ্যাসাগর , বজ্রের নাদ – বজ্রনাদ
(৬) একাদশী তৎপুরুষ : অধিকরণ কারকের বিভক্তি ‘এ’, ‘তে’, ‘য়’, ‘মধ্যে’ পূর্বপদ থেকে লুপ্ত হয়ে এই সমাস গঠিত হয়।
যেমন- জলে মগ্ন – জলমগ্ন , সত্যে আগ্রহ – সত্যাগ্রহ।
এছাড়াও গঠন ও অর্থ অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের ভাগগুলি হলো—
উপপদ তৎপুরুষ : কৃৎ প্রত্যয়যুক্ত বা কৃদন্ত পদের পূর্বের পদ হলো উপপদ। উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস হয়ে উপপদ তৎপুরুষ সমাস সৃষ্টি হয়।
যেমন- জলে চরে যে – জলচর , ছেলেকে ধরে যে – ছেলেধরা
নঞতৎপুরুষ : এই তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ নঞর্থক অব্যয় হয়।
যেমন- নয় শুভ – অশুভ , নাই মিল – অমিল
অলুক তৎপুরুষ : এই তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি চিহ্ন সমাসবদ্ধ পদে লুপ্ত হয় না।
যেমন- মোমের পুতুল – মোমের পুতুল , হাতে গরম – হাতে গরম
উপসর্গ তৎপুরুষ : না বাচক উপসর্গ ছাড়া অন্য যে কোনো একটি উপসর্গ যে তৎপুরুষ সমাসের পরপদে অবস্থান করে এবং পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে মিলিত হয়ে সমস্তপদ গঠন করে তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরপদ উপসর্গটি সমস্তপদে স্থান পরিবর্তন করে পূর্বে বসে ও নিজের অর্থের প্রাধান্য ঘটায়।
যেমন— লৌকিকের অতি – অতিলৌকিক , দানের অনু – অনুদান
ব্যাপ্তি তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে স্থান ও কালের ব্যাপ্তি বোঝায় এবং পূর্বপদের ব্যাপ্তিবোধক পদটি লোপ পায়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ বলে।
যেমন— জানু পর্যন্ত = আজানু , চিরকাল ব্যাপী রুগ্ন = চিররুগ্ন
ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদটি ক্রিয়াবিশেষণ হয়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বলা হয় ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ।
যেমন— ঘনরূপে সন্নিবিষ্ট – ঘনসন্নিবিষ্ট , অর্ধরূপে দগ্ধ = অর্ধদগ্ধ
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাস : বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ বা শব্দ মিলে যে সমাস হয়, এবং বিশেষ্যের বা পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলা হয়।
যেমন— (ক) দুটি পদই বিশেষ্য : যে মেয়ে সে-ই মানুষ – মেয়েমানুষ
(খ) দুটি পদই বিশেষণ – যা মিঠে তাই কড়া – নিঠেকড়া
(গ) পূর্বপদ বিশেষণ পরপদ বিশেষ্য পূর্ণ যে চন্দ্ৰ = পূর্ণচন্দ্ৰ
(ঘ) পূর্বপদ বিশেষ্য পরপদ বিশেষণ – সিদ্ধ যে ডিম = ডিমসিদ্ধ
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
(১) সাধারণ কর্মধারয় : আগে উল্লিখিত সমাসের যে শ্রেণীবিভাগ ও উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, তাই হলো সাধারণ কর্মধারয় সমাস।
এছাড়াও আরও কয়েকটি উদাহরণ :
(পৌর্বাপর্ব মেনে) : আগে ধোয়া পরে মোছা – ধোয়ামোছা।
(স্ত্রী বাচক শব্দ পুংবাচক শব্দে পরিণত হওয়া) – মহতী সভা – মহাসভা
(স্বরবর্ণ পরে থাকলে ‘কু’ স্থানে কদ্ হয়) – কু আকার – কদাকার
(২) উপমান কর্মধারয় : এক্ষেত্রে পূর্বপদ উপমান এবং পরপদ সাধারণ ধর্মসূচক হয়। যার সঙ্গে তুলনা করা হয় বা সাদৃশ্য কল্পনা করা হয় তা উপমান।
যেমন— শঙ্গের ন্যায় ধবল – শঙ্খধবল, মিশির মতো কালো – মিশকালো
(৩) উপমিত কর্মধারয় : এক্ষেত্রে উপমেয় বাচক পূর্বপদের সঙ্গে উপমানবাচক পরপদের সমাস ঘটে। যেখানে উপমান পদের সঙ্গে উপমেয় পদের সমাস হয়।
যেমন— নর সিংহের ন্যায়-নরসিংহ, লোচন পদ্মের ন্যায় – পদ্মলোচন
(৪) রূপক কর্মধারয় : এক্ষেত্রে পূর্বপদ উপমেয় এবং উত্তরপদ উপমান, কিন্তু তুলনা নয়, পরস্পরের অভেদ বোঝানো হয়।
যেমন— মন রূপ মাঝি – মনমাঝি , দুঃখরূপ অনল – দুঃখানল
(৫) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : এক্ষেত্রে সমাসের সমাসবদ্ধ পদে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত ব্যাখানমূলক পদের বিলুপ্তি ঘটে।
যেমন— সিংহ চিহ্নিত আসন – সিংহাসন , পল মিশ্রিত অন্ন – পলান্ন
বহুব্রীহি সমাস
বহুব্রীহি সমাস : যে সমাসের সমস্তপদে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান না হয়ে, বরং অন্য একটি পদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমন:- বহুব্রীহি (ধান) আছে যার=বহুব্রীহি।
বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
(১) সমানাধিকার বহুব্রীহি : এখানে পূর্বপদ ও পরপদের এই বিভক্তি থাকে, পূর্বপদ বিশেষন ও পরপদ বিশেষ্য হয়।
যেমন— লব্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠা যার দ্বারা / কর্তৃক – লব্ধপ্রতিষ্ঠ , নাই মল যাতে – নির্মল , পক্ক কেশ যার – পক্ককেশ
(২) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : এক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটির পৃথক বিভক্তি থাকে, এবং দুটি পদই বিশেষ্য হয় কিন্তু এদের মধ্যে একটি পদ অধিকরণ বিভক্তিযুক্ত হয়।
যেমন— শূল পাণিতে যার = শূলপাণি , পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ
(৩) ব্যতিহার বহুব্রীহি : একই উপকরণ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে একই ক্রিয়ার অনুষ্ঠান বোঝাতে একই পদের পনরুক্তি হয়, এক্ষেত্রে এখানে পূর্বপদের অন্ত্যস্বর ‘আ’ আর পরপদের অন্ত্যস্বর হয় ‘ই’।
যেমন— লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি , কানে কানে যে কথা / মন্ত্রণা – কানাকানি
(৪) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি : এক্ষেত্রে ব্যাসবাক্যের ব্যাখ্যামূলক সমস্যমান পদগুলির লোপ হয়।।
যেমন- পদ্মের ন্যায় সুন্দর সুখ যার – পদ্মমুখী , পাঁচ সের ওজন যার – পাঁচসেরি।
(৫) নঞর্থক বহুব্রীহি : নিষেধার্থক অব্যয়ের যোগে এই বহুব্রীহি সমাস সৃষ্ট হয়।
যেমন— নাই অস্ত যার = অনন্ত , নাই তার যাতে = বেতার।
(৬) অলুক বহুব্রীহি : এই ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটির যে কোনো একটির বিভক্তি লোপ হয় না।
যেমন— হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি , মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত।
(৭) সহার্থক বহুব্রীহি : ‘সহিত’ বা ‘সম’ সূচক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাসে এই সমাস নিষ্পন্ন হয়।
যেমন- মানের সহিত বর্তমান – সমান , সহ উদর যার = সহোদর
(৮) সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি : এখানে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণ এবং উত্তরপদ বিশেষ্য।
যেমন- দো (দুই) নল যার = দোনলা , দশ আনন যার = দশানন
দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব সমাস : এখানে দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ হল জোড়া। যে সমাসে সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলা হয়। |
যেমন:- অহি ও নকুল = অহিনকুল, মা ও বাবা = মা-বাবা, আলো ও ছায়া = আলোছায়া
দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণীবিভাগ :
(১) সমার্থক দ্বন্দ্ব : সমস্যামান পদগুলি একই অর্থবিশিষ্ট।
যেমন— কাগজ ও পত্র = কাগজপত্র , মাথা ও মুণ্ডু = মাথামুণ্ডু
(২) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব : দুটি বিপরীত অর্থযুক্ত পদের মিলনে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস হয়।
যেমন— বেচা ও কেনা = বেচাকেনা , দিন ও রাত = দিনরাত
(৩) অলুক দ্বন্দ্ব : সমস্যমান পদগুলির বিভক্তি লুপ্ত হয় না।
যেমন— বুকে ও পিঠে – বুকে পিঠে , মায়ে ও ঝিয়ে – মায়েঝিয়ে
(৪) একশেষ দ্বন্দ্ব : সমস্ত সমস্যমান পদগুলি সমাসবদ্ধ হয়ে যে একটি মাত্র পদে পরিণত হয়, তা ওই সমস্যমান পদগুলির একটি ঈষৎ পরিবর্তিত রূপ।
যেমন— আমি, তুমি ও সে – আমরা ; রানু, বেনু ও কানু = রানুরা
(৫) এছাড়া আছে ‘অনকার’ অর্থ প্রকাশক দ্বন্দ্ব।
যেমন – জল ও টল = জলটল , হাতে ও নাতে = হাতেনাতে।
দ্বিগু সমাস
দ্বিগু সমাস : যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয়ে সমাহার বা সমষ্টি বুঝায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়।
যেমন: তিন প্রান্তরের সমাহার = তেপান্তর
তিন পদের সমাহার = ত্রিপদী।
দ্বিগু সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
(১) তদ্ধিতার্থক দ্বিগু : তদ্ধিত প্রত্যয় দ্বারা নিষ্পন্ন পদে সৃষ্ট সমাস।
যেমন— এক কড়ি দ্বারা ক্রীত মানুষ = এককড়ি
(২) সমাহার দ্বিগু : সমস্ত পদে একযোগে বহু ব্যক্তি বা বস্তুর সমাহার বোঝায়।
যেমন— পঞ্চভূতের সমাহার = পঞ্চভূত , শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী।
অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয়ীভাব সমাস : যে সমাসের সমস্যমান পদদ্বয়ের পূর্বপদ অব্যয় হয়ে অর্থের দিক প্রাধান্য লাভ করে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলা হয়।
যেমন: কুলের সমীপে = উপকুল , দিন দিন = প্রতিদিন।
অভ্যয়ীভাব সমাস বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—
(১) ব্যাপ্তি অর্থে : বাল্য হতে – আবাল্য, আদি হতে অন্ত – আদ্যন্ত।
(২) সামীপ্য অর্থে : কূলের সমীপে = উপকূল, নগরের সমীপে = উপনগরী।
(৩) অভাব অর্থে : ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ, ভাতের অভাব = হাভাতে।
(৪) যোগ্যতা অর্থে : ধ্যানের যোগ্য অনুধ্যান, প্রেরণার যোগ্য = অনুপ্রেরণা
(৫) বৈপরীত্য অর্থে : ফলের বিপরীত = প্রতিফল, ধ্বনির বিপরীত = প্রতিধ্বনি ইত্যাদি।